1. admin@dainikkhoborchitra.com : admin :
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা কেশবপুরের পথ-প্রান্তর রাঙিয়ে তুলেছে রক্তরাঙা ফুল কৃষ্ণচূড়া কেশবপুরে অবৈধভাবে প্লেট ঝুলিয়ে জমি ও বাড়ির মালিকানা দাবী করে হয়রানীর অভিযোগ তীব্র তাপদাহে কেশবপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ। কেশবপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান , পুরুষ ও মহিলা ভাইস কে কি প্রতীক পেল কেশবপুরে আস্থা পল্লী উন্নয়ন সমবায় সমিতির অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Doa and Iftar mahfil organized by Keshavpur Reporters Club ভূয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার-০৭। কেশবপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপহরণ মামলায় প্রাইভেট গাড়ীসহ ৩ জন আটক

আজ ২০ মে কেশবপুরের সীমান্তবর্তী চুকনগর গণহত্যা দিবস

দৈনিক খবরচিত্র ডেস্ক
  • সময় : শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩
  • ৪৭ বার পঠিত
সংবাদটি শেয়ার করুন:

পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর

যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক চুকনগর গণহত্যা দিবস আজ ২০ মে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আজকের এই দিন পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ১০ হাজারেরও উর্ধ্বে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। বিশ্বের গণহত্যার ইতিহাসে এগুলাে পর্যালাচনা করে দেখা গেছে, এটাই বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণহত্যা। বিশ্বের আর কােথাও এতো অল্প সময়ে একসাথে এতাে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মে মাসের মাঝামাঝি সময় বৃহত্তর খুলনার বাগেরহাট, রামপাল, মােড়লগঞ্জ, কচুয়া, শরণখােলা, মোংলা, দাকােপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, চালনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ ভারতে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর থেকে সাতক্ষীরা হয়ে তারা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য একে অপরের সাথে যােগাযােগ করে ১৯ মে রাতের মধ্যে সবাই চুকনগর এসে পোঁছায়। খুলনা জেলা সদর থেকে ৩০ কি.মি. দূরে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থান চুকনগর। ওই দিন রাতে কয়েক হাজার মানুষ চুকনগরের পাতােখােলা বিল, রয়েল স্পোটিং ফুটবল মাঠ, রায় পাড়া, মালো পাড়া, তাতি পাড়া, কাঁচাবাজার, মাছবাজার, কাপুড়িয়া পট্টি, গরু হাট, কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে থাকে। রাতটা এখানে পার করে সকালে কিছু মুখে দিয়ে রওনা হবে ভারতের উদ্দেশ্যে। পর দিন ২০ মে খুব ভাের কেউ কেউ চুকনগর ছেড়ে রওয়ানা হয়ে যায় তবে অধিকাংশরা সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে রওনা হবে। এজন্য সকালে তারা রান্না বান্নার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কারও রান্না ততক্ষন শেষও হয়েছে। কেউ বা ভাতের থালা নিয়ে বসে পড়েছে। ঠিক এমনই মুহুর্তে সাতক্ষীরা থেকে পাক বাহিনীর একটি ট্রাক ও একটি জীপ চুকনগর সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে মালতিয়া মােড়ের ঝাউতলায় এসে হঠাৎ থেমে যায়। মালতিয়া গ্রামের চিকন আলী মােড়ল নামের এক বৃদ্ধ রাস্তার পাশে পাট ক্ষেতে কাজ করছিলেন। গাড়ীর শব্দে তিনি উঠে দাঁড়ালে পাক বাহিনী তাকে প্রথম গুলি করে হত্যা করে। এরপর একই গ্রামের সুরেন্দ্র নাথ কুন্ডুকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা বাজারের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করতে থাকে নিরিহ মানুষকে। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ কাউকে তারা সেদিন রেহাই দেয়নি। গুলির শব্দ আর এখানে জড়াে হওয়া নারী-পুরুষেরা আর্তচিৎকারে আতংকিত হয়ে পড়ে আশ পাশের গ্রামের মানুষ। ভারী হয়ে ওঠে সমগ্র এলাকার পরিবেশ। চারিদিকে শুধু কান্নার শব্দ, হুড়াহুড়ি আর দৌঁড়াদৌঁড়ি। এরপর সবকিছুই একসময় নীরব হয়ে যায়। তখন চারিদিকে পড়ে আছে মানুষের লাশ আর তাজা রক্ত। সেদিন চুকনগর এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। পাকিস্তনীদের এই তান্ডবলীলা ২/৩ ঘণ্টা ধরে চলছিল বলে জানা যায়। সেদিন মানুষের আর্তচিৎকার ও দোঁড়াদৌঁড়িতে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়েও মরেছে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ। কত শিশুকে তার মা ফেলে পালিয়েছে। কিন্তু তারা কেউ বাঁচতে পারেনি। অনেক শিশু মৃত মায়ের বুকের উপর স্তন পান করছিল। কিন্তু তার জন্মধাত্রী মা চলে গেছে না ফেরার দেশে। মাকে হারিয়ে কত শিশু অসহায়ের মত বসে কাঁদছে এমনই সব দৃশ্য সেদিন দেখছিল এলাকার মানুষ। পাকহানাদারদের তান্ডবে চুকনগরের ধুসর মাটি আর সবুজ ঘাস মুহূর্তের মধ্যে লাল হয় উঠেছিল। চুকনগর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভদ্রা নদীতে ছিল লাশের বহর। ভদ্রা নদীতে পানির সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিল মানুষের তাজা রক্ত। কােথাও পা দেয়ার জায়গা নেই। চুকনগর বাজারের অলিতে গলিতে শুধু লাশ আর লাশ। হানাদার বাহিনীর বর্বর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর চুকনগর বাজারে শকুন ও কুকুরের দখলে চলে যায়। অনেক মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে নিয়ে টানাটানি করেছে শকুন আর কুকুর। এই করুণ দৃশ্য কখনও ভুলবার নয়। শত শত বছর ধরে এই হত্যাকান্ডর তথ্য মানুষ স্মৃতিতে রাখবে। সেদিন চুকনগরে ১০ হাজারেরও উর্ধ্বে নিরীহ মানুষকে তারা নির্বিচার হত্যা করেছিল বলে প্রত্যক্ষ দর্শীদের বিবরণে জানা গেছে। সেদিনের এ নৃশংস ঘৃন্যতম দৃশ্য পৃথিবীর ইতিহাসে সব গণহত্যার চেয়ে বর্বর বলে অনেক বিশেষজ্ঞদের অভিমত। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম দিন। এদিনটি শুধু চুকনগরের জন্য নয় বাংলাদশের জন্য একটি ভয়াল ও শােকাবহ দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম দিন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য চুকনগর গণহত্যার ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এখনো স্থান পায়নি। এজন্য এদিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
এই দিনটিকে স্মরণে রাখতে চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতি রক্ষা পরিষদ প্রতি বছরের মত এবারও ২০ মে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবারের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে সকাল ৯ টায় জাতীয় পতাকা উত্তােলন, শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন, বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ১০টায় স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তি ঊপলক্ষে এবং চুকনগর গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ৫২ ডালি পুষ্প পাপড়ি ভদ্রা নদীতে ছিটানো। দুপুর ১২টায় চুকনগর ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্বরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। স্বরণসভায় সভাপতিত্ব করবেন চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও চুকনগর ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম। সব শেষে যশাের উদীচীর পরিবেশনায় সাউন্ড এন্ড লাইট শাে ও মনােজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।


সংবাদটি শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর