1. admin@dainikkhoborchitra.com : admin :
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা কেশবপুরের পথ-প্রান্তর রাঙিয়ে তুলেছে রক্তরাঙা ফুল কৃষ্ণচূড়া কেশবপুরে অবৈধভাবে প্লেট ঝুলিয়ে জমি ও বাড়ির মালিকানা দাবী করে হয়রানীর অভিযোগ তীব্র তাপদাহে কেশবপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ। কেশবপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান , পুরুষ ও মহিলা ভাইস কে কি প্রতীক পেল কেশবপুরে আস্থা পল্লী উন্নয়ন সমবায় সমিতির অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Doa and Iftar mahfil organized by Keshavpur Reporters Club ভূয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার-০৭। কেশবপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপহরণ মামলায় প্রাইভেট গাড়ীসহ ৩ জন আটক

কেশবপুর অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি

দৈনিক খবরচিত্র ডেস্ক
  • সময় : মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৯০ বার পঠিত
সংবাদটি শেয়ার করুন:

পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর
গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি। কেশবপুর অঞ্চলে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। বিলুপ্তির পথে এ ইঞ্জিন বিহিন পরিবেশবান্ধব দুই চাকার গাড়িটি। মাঝে মধ্যে কেশবপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দুই-একটি গাড়ি ধান বা অন্যান্য মালামাল বহন করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরাতো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। যুগ যুগ ধরে গরুর গাড়ি কৃষকের কৃষিক্ষেত্রে ফসল বহন এবং ফসল আনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

গরুর গাড়ি হল দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা একপ্রকার যান বিশেষ। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র কাঠের সাথে দুটি কাঠের চাকা যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এ গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পিছনে বসেন যাত্রীরা বা কৃষকের বিভিন্ন ফসল। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পিছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। কাদার মধ্য দিয়েও মালবাহী গাড়ি ঠেলে নিয়ে যেত বলিষ্ঠ একজোড়া গরু। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যগতভাবে গরুর গাড়ি এক দশক আগেও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে অনেক ব্যবহৃত হত। অনুমান করা হয়, খ্রীস্ট জন্মের ১৫০০/১৬০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
দুই/তিন যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধু যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র ভরসা। বর বিয়ের জন্যে ছাওনি (টাপর) সাজানো গরুর গাড়ির বহর নিয়ে বিয়ে করতে যেত। শশুরবাড়ী ও বাবার বাড়ী আসা যাওয়া করতো। রাস্তা-ঘাটে গরুর গাড়ি থেকে পটকাও ফুটাতো। যে সব গৃরস্থের পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে কখনো জৈব সার তথা গোবরের সার, কখনো গরুর খাবার ও লাঙল-মই-জোয়াল নিয়ে যেত মাঠে। উঁচু সুরে গাইত, ‘ওঁকি গাড়িয়াল ভাই-কত রব আমি পন্থের পানে চাঁইয়া রে’। গরুর চালক বা গাড়িওয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলতো বধু, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিবার নাও মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’।

এক বিল থেকে আর এক বিলে কৃষকেরা জমি চাষাবাদ এবং মালামাল বহনের জন্য গরুর গাড়ি বাহন হিসেবে ব্যবহার করতো। গ্রামাঞ্চলের রাস্তা অধিকাংশ পাকা না থাকায় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতো না। ফলে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। আধুনিক যুগে গ্রামীণ জনপদের উন্নতি হওয়ায় নানাধরণের মোটরচালিত যানের কারণে ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার নেই বললেই চলে। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

এখন যেমন আমরা নিজেদের ব্যাবহারের জন্য প্রাইভেটকার বা মাইক্রো ক্রয় করে থাকি, ঠিক তেমনি আগে গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন লোকজন ও গৃহস্থরা গরুর গাড়ি নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে বাড়িতে রাখতেন। আপদ-বিপদে তা তারা বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন। কখনও কখনও তা আবার ভাড়ায় খাটাতেন। এখন আর গরুর গাড়ি নেই। গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এসে গ্রাম বাংলার সেই জনপ্রিয় গরুর গাড়ি বাহনটি এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

দেশে এখন অধিকাংশ অলিতে-গলিতে পাকা রাস্তা হওয়ায় বর্তমান যান্ত্রিক যুগে পরিনত হয়েছে। মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, ভ্যান, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে প্লেন, মোটরগাড়ি, মাইক্রোবাস রেলগাড়ি, বেবী ট্যাক্সি, ইজিবাইক, মহেন্দ্র, রিক্সা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি হচ্ছে, পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন কিন্তু যান্ত্রিক গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। এই ডিজিটাল যুগে অল্প সময়ে অধিক রাস্তা পাড়ি দিতে এই যান্ত্রিক গাড়িগুলো অহরহ ব্যবহার করা হয়। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। কালের সাক্ষী গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি স্বরুপ।
ছবিঃ
০৭/০২/২৩


সংবাদটি শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর